তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম – তাহাজ্জুদ নামাজের সময় সূচি ২০২৪

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও সময় সূচি ২০২৪

আসসালামু আলাইকুম। এখন আমরা তাহাজ্জত নামাজের সঠিক সময় কখন তবিস্তারিত তুলে ধরব। যদি আপনারা এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে জানতে পারবেন।

আমরা অনেকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে থাকি। কিন্তু কখন পড়তে হয় তা জানি না। এর কারণে ভুল টাইমে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে থাকি। যার ফলে আমাদের সোয়াব কম হওয়া সম্ভব না থাকে বা তাহাজ্জুদ নামাজ কবুল না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এখন আমরা তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক সময় কখন ২০২৪ সম্পর্কে জানাবো। জানতে হলে বিস্তারিত পড়তে হবে।

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত এবং উপকারিতা।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম - তাহাজ্জুদ নামাজের সময় সূচি ২০২৪

প্রিয় পাঠক তাহাজ্জুদ নামাজের প্রচুর পরিমাণে ফজিলত রয়েছে। যদি তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে আমরা বর্ণনা করতে যাই তাহলে তা কখনোই শেষ করা যাবে না। আমরা অনেক সময় নফল ইবাদত করে থাকি বা নফল সালাত আদায় করে থাকি। কিন্তু নফল সালাত আদায়ের জন্য অন্যান্য সালাতে যে সব সোয়াব পাওয়া যায় তার থেকে অনেক গুনে বেশি ফজিলত পাওয়া যায় তাহাজ্জুদ নামাজে।

আল্লাহতালা নিজে বলেন যদি আমাকে কেউ পেতে চাও তাহলে নিরিবিলি রাত্রিবেলায় তাহাজ্জুদ নামাজের মধ্যে আমাকে ডাকো। আমি তোমার ডাকে সাড়া দিব। এবং বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায় আল্লাহ তাআলা বলেন যে যখন বান্দা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে তখন আমি তার অতি নিকটে থাকি অর্থাৎ সবথেকে কাছে থাকি।

আরো পড়ুন = প্রিয় মানুষ কে নিয়ে কিছু কথা।

তাহলে ভাবতে পেরেছেন যে তাহাজ্জত নামাজের কতটা ফজিলত রয়েছে। যদি কেউ কোন কিছু চাওয়ার থাকে সে যদি তাহাজ্জুদ নামাজে আল্লাহর কাছে চোখের পানি ফেলে চায় তাহলে আল্লাহ তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না। সেটা অবশ্যই পাবে। কারণ আল্লাহ তার অতি নিকটে থেকে তার চাওয়া পাওয়া পূরণ করে দেয়।

সময়সূচী ২০২৪।

এখন আমরা তাহাজ্জুদ নামাজের সময়সূচী সম্পর্কে জানাবো। কারণ অনেকেই জানে না যে তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক সময় কখন। যদি বান্দার অধিক পরিমাণে গুনাহ হয়ে যায় বা ভুল করে ফেলে সেই বান্দা যদি আল্লাহর কাছে তওবা করে তাহাজ্জুদ নামাজের মধ্যে চোখের পানি ফেলে ক্ষমা চায় তাহলে আল্লাহর কাছে সেই বান্দা উত্তম বান্দা হিসেবে পরিচিত। তাই তাহাজ্জুদ নামাজের সময়সূচী আমাদেরকে জানা উচিত।

তাহাজ্জুদ নামাজে তেমন কোন সময়সূচি নেই। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যে শেষ রাত্রির দিকে তোমরা তাহাজ্জুদ নামাজ সালাত আদায় কর। শেষ রাত্রি বলতে আমরা বোঝায় যে ফজরের একটু আগে অর্থাৎ তিনটা থেকে চারটার মধ্যে শেষ রাত্রি বোঝানো হয়ে থাকে। যদি আপনার তিনটা থেকে চারটার মধ্যে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করেন তাহলে সেটি আল্লাহর কাছে অনেক পরিমাণে গ্রহণযোগ্য হবে।কবারন আল্লাহ শেষ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন।

তাই তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক সময় হল (০৩:০০am থেকে ০৪:০০am)

নিয়ম।

আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে যা তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে কিছুই জানেনা। এমন মানুষ রয়েছে যারা দীর্ঘদিন নামাজ না পড়ার পর তাদের মনের মধ্যে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে সে আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম ভাবে ক্ষমা নিতে চাই। সে ক্ষেত্রে এটি তাহাজ্জুদের মধ্য দিয়ে সব থেকে বেশি ফজিলত এবং ক্ষমা পাওয়া যায়। 

সে কারণে যদি কোন ব্যক্তি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে যায় তখন সে নিয়ম যানে না। তাই এখন আমরা তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম গুলো সুন্দরভাবে লাইন অনুসারে বলবো। যদি আপনারা তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম গুলো জানতে চান তাহলে অবশ্যই আমাদের সঙ্গে থাকতে হবে এবং শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে।

তাহাজ্জুদ নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত পূর্ণ এবাদত। এই এবাদত এর মত অন্যান্য নফল ইবাদত হবে না। যেমন যত নফল ইবাদত রয়েছে তার মধ্যেও তাহাজ্জুদ নামাজ অন্যতম শ্রেষ্ঠ এবাদত।

সময়

তাহাজ্জুদ নামাজ এশারের পর থেকে শুরু করে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত। কিন্তু বিভিন্ন হাদিস অনুসারে জানতে পারা যায় যে সব থেকে শেষ রাতের দিকে এটি গ্রহণযোগ্য এবং সর্বোত্তম হয়। তবে যদি আপনি শেষ রাতের দিকে না উঠতে পারেন তাহলে মধ্যরাতে পড়তে পারেন। এতে করে ভালো পরিমাণে সোয়াব পাওয়া যায়। একটা কথা মনে রাখবেন তাহাজ্জুদ নামাজ হলো আল্লাহর সাথে আপনার সম্পর্ক পরিপূর্ণ করা। পরিপূর্ণ করা অর্থাৎ আল্লাহর শেষ রাতের দিকে প্রথম আসমানে নেমে আসে।

কয় রাকাত সালাত পড়বো?

সর্বনিম্ন দুই রাকাত পড়তে হবে। এর ওপরে বা এর ঊর্ধ্বে আপনি যত ইচ্ছা তত পড়তে পারেন। (হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম) তাহাজ্জুদ নামাজের কমপক্ষে ৮ রাকাত আদায় করতেন। তবে এই ৮ রাকাত পড়তে হবে এমনটি নয় আপনি দুই রাকাত, চার রাকাত, ৬ রাকাত, ৮ রাকাত, দশ রাকাত পড়তে পারেন। কিন্তু (হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম) ৮ রাকাতই পড়তেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত

নিয়ত আমরা অনেকেই করতে পারিনা। যার ফলে আমাদের অনেক সংকোচ বোধ হয়। কিন্তু আমরা একটি বিষয় খেয়াল করলেই এটি আমাদের কাছে পানির মতো সহজ হয়ে যাবে। যেমন তাহাজ্জুদ নামাজের যদি নিয়ত করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার মনকে আগে পরিপূর্ণ পরিষ্কার করতে হবে এবং মনে মনে ইচ্ছা পোষণ করতে হবে যে আমি আল্লাহর সন্তুষ্ট লাভের জন্য এই তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করছি। তাহলে আপনার তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত হয়ে যাবে।

তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক নিয়ম।

বেশ কয়েকটি নিয়ম রয়েছে। যে নিয়মগুলো আপনাকে অবশ্যই অনুসরণ করা লাগবে।

  • তাহাজ্জুদ নামাজ অন্যান্য নামাজের মতই করে আদায় করতে হয়।
  • তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সময় আল্লাহর উপর ভয় করতে হয়।
  • তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার সময় আল্লাহর কাছে সেজদায় অনেক কিছু চাইতে হয়। ( যেগুলো আরবি ভাষায়) বাংলায় নয়।
  • নামাজের মধ্যে সুন্দর এবং বড় করে কোরআন মাজীদ তেলাওয়াত করতে হয়।( হযরত মুহাম্মদ সাল্লাম) বড় করে কোরআন তেলাওয়াত করতেন।
  • এবং আল্লাহর কাছে হাত তুলে মনে যত ইচ্ছা সবগুলো চাওয়া।

সুন্নত নাকি নফল?

তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল এগুলো আমরা অনেকেই জানিনা ।এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক বিষয় কিন্তু না জানার কারণে আজ আমরা আপনাদের সামনে তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল তা তুলে ধরবো।

তাহাজ্জুদ নামাজ হলো নফল।

সময়।

তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার জন্য একটি নির্ধারিত সময় রয়েছে। যে সময়ের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজ যদি আদায় করা যায় তাহলে আল্লাহর কাছে বেশ গ্রহণযোগ্য এবং পছন্দনীয় হয়।

তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক সময় হলেও শেষ রাত্রি অর্থাৎ ফজরের আজানের কিছুক্ষণ আগে।

কোন সূরা পড়তে হয় ?

তাহাজত নামাজের সূরা ফাতিহা দিয়ে শুরু করে এর সঙ্গে অন্য সূরা মিলিয়ে পড়লেই হবে। কিন্তু যদি আপনি সেই সূরাগুলো একটু বড় আকারে পড়েন তাহলে সব থেকে বেশি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করা হয়। ছোট করলেও কোন সমস্যা নেই কিন্তু সুরা গুলো সঠিকভাবে পড়তে হবে।

তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক নিয়ম।

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার কয়েকটি সঠিক নিয়ম রয়েছে। যে নিয়মগুলো আমরা অনেকেই জানিনা। সেগুলো এখন আমরা তুলে ধরব।

  1. প্রথমে ওযু করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পাক-পবিত্র হব।
  2. আল্লাহু আকবার বলে ছানা পড়বো।
  3. এরপর বিসমিল্লাহ বলে সূরা ফাতিহা পড়বো।
  4. এরপর বিসমিল্লাহ বলে যে সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা পড়বো।
  5. এবার আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যে (সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম) তিনবার বা তার ঊর্ধ্বে পড়বো।
  6. এবার (সামিউল্লাহ হুলিমান হামিদা) বলে রুকু থেকে উঠবো। এরপর (রাব্বানা লাকাল হাম) বলবো।
  7. এরপর আল্লাহু আকবার বলে সেজদায় যাব।
  8. সেজদাতে যাওয়ার পর (সুবহানা রাব্বিয়াল আলা) তিনবার বা তার ঊর্ধ্বে পড়বো।
  9. এরকমভাবে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে ডানে বামে সালাম ফিরাবো তাহলে নামাজ হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।

মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম!

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম - তাহাজ্জুদ নামাজের সময় সূচি ২০২৪

আমরা এখন জানবো মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম। একটি কথা বলতে কি মেয়েদের এবং ছেলেদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম প্রায় একই। কিন্তু হানাফি মাজহাব অনুযায়ী ছেলেরা নাভির নিচে হাত বাঁধে এবং মেয়েরা উপরে। এটুকুই ব্যাস পার্থক্য। আর কোন পার্থক্য নেই।

বাংলা নিয়ত।

যদি আমরা তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বাংলায় করি তাহলে এখানে কোন ধরনের ভুল হবেনা। আমরা যেভাবে নিয়ত করব সেইভাবে কবুল হয়ে যাবে তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত হলো..

আল্লাহ আমি তাহাজ্জুদের দুই রাকাত নামাজ আদায় করছি ।

এই বলে যদি আপনার তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করেন তাও হবে। অথবা আপনার মনের মতো করে নিয়ত করলে হবে। অন্যান্য বড় বড় আলেমরা বলে থাকে যে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বা যে কোন নামাজের নিয়ত মনে মনে করলেই হবে। চাইলে আপনি মনে মনে করতে পারেন মুখে বলার দরকার নাই।। আর বললেও তেমন কোন সমস্যা হবে না।

তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম - তাহাজ্জুদ নামাজের সময় সূচি ২০২৪

তাহাজ্জুদ নামাজ হলো দোয়া কবুলের একটি অন্যতম সময়। আপনারা যদি আরবিতে দোয়া জানেন তাহলে সিজদায় যে দীর্ঘক্ষণ ধরে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলতে পারেন বা দোয়া করতে পারেন। অথবা যদি আপনারা হাত তুলে দোয়া করেন তাহলে এটি আল্লাহর কাছে বেশ গ্রহণযোগ্য। কারণ বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায় যদি আল্লাহর কাছে কেউ হাত তুলে তাহলে আল্লাহ তাকে খালি হাতে ফেরায় না।(হাদিশ তিরমিযী)

তাহাজ্জুদ নামাজে যদি দোয়া করতে চান তাহলে আপনার মনের মধ্যে যত চাওয়া পাওয়া আছে সেগুলো চাইবেন। এগুলো বাংলাতেও করতে পারেন হাত তুলে। কিন্তু একটি বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখবেন যে নামাজের মধ্যে কোন সময় বাংলাতে দোয়া করা যাবেনা।

তাহাজত নামাজ নিয়ে কিছু প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্ন তাহাজ্জুদ কয় রাকাত?

উত্তর সর্বনিম্ন দুই রাকাত হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম ৮রকাত পড়তেন।

প্রশ্ন= তাহাজ্জুদ সঠিক সময় কখন?

উত্তর= সাড়ে তিনটা অথবা থেকে শুরু করে সুবহে সাদিক পর্যন্ত।

প্রশ্ন= তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল?

উত্তর =নফল।

প্রশ্ন =মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম কি?

উত্তর= ছেলেদের মতই।

প্রশ্ন =নামাজ কোন সূরাতে পড়তে হয়?

উত্তর= সুরা ফাতেহা পড়ে যে কোন অন্য সূরা মিলিয়ে নিবেন।

প্রশ্ন= তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত পড়া উত্তম?

উত্তর =হযরত মুহাম্মদ সাঃ ৮ রাকাত পড়তেন (হাদিস বুখারী)।

উপসংহার

আজ আমরা এই আর্টিকেলের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম এবং তাহাজ্জুদ নামাজের সময়সূচি ২০২৪ সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করেছি। যদি আপনারা এ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে সবকিছুই জেনে গেছেন। তাহাজ্জুদ নামাজ হল আল্লাহর সাথে সম্পর্ক অনেক কাছ থেকে করা। তাহাজ্জুদ নামাজের মধ্য দিয়ে আল্লাহকে আপনি পেয়ে যাবেন অতি কাছে। তাই আমরা সকলে পড়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।আশ্চর্যজনক সত্যক্রান্তিলগ্ন পরিস্থিতিG

Leave a Comment